বাঙালি মানেই আবেগ। বাঙালির জীবনের দিনপঞ্জির সাথে সবসময় কোনো না কোনো খাবারের গন্ধও মিশে থাকে - সে রোববারের সকালের লুচিই হোক বা সন্ধ্যেবেলার মুড়ি-আলুরচপ-বেগুনীই হোক। ঠিক সেরকমই, আমাদের জীবনের হাসি-দুঃখ-কান্না-প্রেম-ভালোবাসা-বিদ্রোহ - সব আবেগের সাথে জড়িয়ে থাকে দুদুটো নাম - বিশ্বগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। হয়তো বা আমরাই শেষ প্রজন্ম যাদের জীবনের সাথে এঁরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত, হয়তো বা না। প্রশ্ন এটাই, যে আগামী প্রজন্মকে আমরা কি শিখিয়ে যেতে পারবো আমাদের ঐতিহ্য?

আমাদের বাচ্ছারা অনেকেই ডাল-ভাত না খেয়ে পাস্তা খেতে ভালোবাসে। আবার অনেকেই সেদ্ধভাত এর জন্য পাগল! অথবা মায়ের হাতের রান্না করা কষা মাংস। যেভাবে আমরা আমাদের খাবারের সাথে জন্ম থেকেই বাচ্ছাদের পরিচয় করিয়ে থাকি, ঠিক সেভাবেই আমাদের সংস্কৃতির সাথে তাদের পরিচয় করাতে পারছি তো? পারছি কি পরবর্তী প্রজন্মকে পরিচয় করাতে আমাদের সাহিত্য ও শিল্পের সাথে?

মনে হয় পারছি - আমাদের বাঙ্গালী এসোসিয়েশনের অনুষ্ঠানে কচি-কাচাদের নাচ-গান-আবৃত্তি আমাদের মন ভুলিয়ে দেয় আনন্দে। সাথে সাথে আমাদের এই রবীন্দ্র-নজরুল বিশেষ সংখ্যার সৃজন-ও চলেছে পাল্লা দিয়েই। ছবি দিয়ে শুরু, কিন্তু চাই কবিতা-গল্প-সাহিত্য দিয়ে হোক শেষ। বাচ্ছাদের বাংলা পড়া শেখার সাথে সাথে অনুপ্রেরিত করা প্রয়োজন বাংলা লেখার জন্য! চাই আরো আরো বই - খিদে বারবার জন্য! বাঙ্গালী এসোসিয়েশনের উদ্যোগে সংগঠিত হোক আমাদের নিজস্ব বাংলা লাইব্রেরি!

আর তারই সাথে, একবার ভেবে নিতে পারি যেন, এ কোন পৃথিবী আমরা ছেড়ে যেতে চলেছি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য! হিংসার উন্মত্ততায় মাতোয়ারা কিছু জল্লাদের হাথে কি মানায় আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী? যখন মিথ্যে বলাটাই প্রচলন, তখন সত্যি বলতে শেখানোর প্রয়োজনটাও অনেকটাই, অনেকটাই বেশি! সে দায়িত্ব তো আমাদেরই।

কবিগুরু লিখে গেছেন -

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।

সাথে তাল মিলিয়ে বিদ্রোহের আওয়াজ তুলেছিলেন কাজী নজরুল -

আমি সেই দিন হব শান্ত,
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না,
বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত!

কবিগুরু আর বিদ্রোহী কবি, এদের দুজনকে স্মরণ করার মাধ্যমেই আমরা পেতে পারি জীবনের সেই পরিপূর্ণতার আস্বাদ। শিখতে পারি, শেখাতেও পারি - প্রেম, মানুষকে ভালোবাসা, প্রয়োজনে সোচ্চারে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। শেখাতে পারি ধর্মান্ধতা ভুলে, মনুষত্বের ভাষা।

আশাকরি, ফিনল্যাণ্ডএ আগামী প্রজন্মের কাছে আমাদের দায়বদ্ধতার পরিচয় রেখে যাবে আমাদের ‘সৃজন’ ও রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যার অনুষ্ঠান - কলা ও সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে মানুষের মানুষত্বকে প্রতিষ্ঠা করার আমাদের এই অঙ্গীকার, চলুক আবহমান।

ইন্দ্র
২৯.০৫.২০২৫