যদি তোমায় আমি চাঁদ বলি , ভুল হবে আমার…….তুমি চাঁদের চেয়েও সুন্দর
যদি তোমায় আমি ফুল বলি, ভুল হবে আমার………তুমি ফুলের চেয়েও সুন্দর…
ফুলের থেকে সুন্দর কি ? ফুলের যুদ্ধ ? French ভাষায় বললে ‘Bataille de Fleurs’ আমরা দেখেছি শান্ত-স্নিগ্ধ ‘Promenade des Anglais’ সমুদ্রপাড়ে ফুলের মহাসড়ক। সেই মহাসড়ক ভরে সাজানো ফ্লোটগুলোতে হাজারো ফুলের বাহার, শিল্পীরা রঙিন পোশাক পরে খেলছেন ফুলের যুদ্ধ, সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম আমরাও। দর্শকের উৎসাহী চোখ আর প্রতিবার ফুল হাতে পাওয়ার খুশি সেই যুদ্ধে আনন্দের আমেজ যোগ করেছিল। নীল সমুদ্র, বাতাসে মিমোসা ফুলের সুগন্ধ আর চারদিকে হাসির কল্লোল—মনে হচ্ছিল আমরা যেন রঙের এক জীবন্ত ছবির মধ্যে হাঁটছি।
আমরা যখন কার্নিভালের কথা ভাবি, তখন RIO এবং Venice সাধারণত মনে রাখি । তবে চকচকে French Riviera এ, ‘Carnival de Nice’, 13তম শতাব্দী থেকে ভিড়কে চমকে দিচ্ছে, এটি বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত এবং প্রিয় কার্নিভাল। ভূমধ্যসাগরের পটভূমির বিপরীতে, সুন্দর প্রতিটি ফেব্রুয়ারিকে রঙ, সংগীত এবং হাসির ঘূর্ণিতে রূপান্তরিত করে।
ইতিহাস ঘাটলে , প্রথম দিকের রেকর্ডগুলি 1294 সালে কার্নিভালের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করে। 1873 সালে, স্থানীয় শিল্পী আলেকসিস মোসা এর নেতৃত্বে কার্নিভালের জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল । পরবর্তী সময়ে কার্নিভালকে একটি কুচকাওয়াজে পুনরায় সজ্জিত করা হয়েছিল, মাস্ক্রেড, ব্যঙ্গাত্মক ভাসমান যুক্ত করা হয়।
প্রতি বছর, একটি বিশেষ থিম বেছে নেওয়া হয় এবং শিল্পীরা রঙিন কুচকাওয়াজের জন্য traditional ঐতিহ্যবাহী 18 টি ভাসমান এবং অন্যান্য মূর্তি তৈরি করে। প্যারেডগুলি দিনরাত অনুষ্ঠিত হয়, যখন Promenade des Anglais, “ফুলের লড়াই” ঘটে।
2024 এর শুরুর দিকে আমরা তিন জন প্রথম Finnish Winter পর বেজায় ক্লান্ত। তাই খুঁজতে বসলাম আমাদের নতুন গন্ত্যব্যস্থল যেখানে একটু হলেও সুয্যিমামার দেখে পাওয়া যায়। Google search জানালো শীতের বসন্তের মতো মনে হলে এমন কোনও জায়গা যদি থাকে Europe তবে এটি ‘Carnival de Nice’. প্রতি ফেব্রুয়ারিতে শহরটি রূপ নেয় হাসি, রঙ আর সুরের মেলায়।
ঝকঝকে French Riviera-র তীরে ছড়িয়ে থাকা ‘Nice’ এমন এক শহর, যা প্রতিটি কোণায় যেন পোস্টকার্ডের ছবি হয়ে ওঠে। নীলাভ ভূমধ্যসাগরের জল ছুঁয়ে যায় Promenade des Anglais-কে, যেখানে তালগাছ দুলছে সমুদ্রের হাওয়ায় আর স্থানীয়রা হেঁটে বেড়াচ্ছেন এক অলস সৌন্দর্যে।
পুরোনো শহর (Vieux Nice)-এর আঁকাবাঁকা পাথরের গলিগুলো রঙিন—ওখর আর টেরাকোটা রঙের বাড়ি, প্রাণবন্ত বাজার আর বাতাসে ভেসে আসা সদ্য-bake করা baguette, cake, pie এর ঘ্রাণের সঙ্গে মিশে থাকা ল্যাভেন্ডারের সুবাস। শহরের ওপরে উঠে দাঁড়িয়ে থাকা Castle Hill (Colline du Château) থেকে চোখ মেলে দেখা যায় লালচে ছাদের নিচে শহর আর তার ওপরে অসীম নীল সমুদ্রের মেলবন্ধন। ফরাসি আভিজাত্য আর ইতালীয় আবহে মিশে ‘Nice’ একইসঙ্গে প্রাণবন্ত ও নিরুদ্বেগ—যেখানে রোদ, শিল্প, খাবার আর Joie de Vivre (জীবন উপভোগের আনন্দ) একসঙ্গে বুনে তোলে এক অবিস্মরণীয় ভূমধ্যসাগরীয় অভিজ্ঞতা।
ফুলের লড়াইয়ের রঙিন ভুবনে
প্রমেনেড ডেস অ্যাংলাইস, সাধারণত একটি শান্ত সমুদ্র উপকূলের বুলেভার্ড খেজুর গাছের সাথে রেখাযুক্ত, ফুল-ভরা পর্যায়ে পরিণত হয়। ভাসা অতীত ঘূর্ণিত, হাজার হাজার ফুল ফোটে, যখন চকচকে পোশাকের অভিনয়শিল্পীরা ভিড়ের মধ্যে ফুল toss করে।
Shubham প্রতিবার ফুল হাতে পেয়ে খুশিতে লাফাচ্ছিল ,গোছা ফুলই বুকে চেপে ধরছিলো! Subrata ক্যামেরায় মুহূর্তগুলো ধরে রাখতে ব্যস্ত , আর আমি নিজেকে প্রমাণ করতে নেমেছিলাম যেন ফুল ধরার প্রতিযোগিতায়—যদিও শেষমেষ হেরে গিয়েছিলাম আশেপাশের বাচ্চাদের কাছে!
নীল সমুদ্র, বাতাসে মিমোসার সুগন্ধ আর চারদিকে হাসির কল্লোল—মনে হচ্ছিল আমরা যেন রঙের এক জীবন্ত ছবির মধ্যে হাঁটছি।
কিং অফ পপ নাইটে দোলা
সূর্য পশ্চিমে ডোবার পর নিস যেন আবার নতুন সাজে সেজে উঠল।
ফুলের কোমল জগতের পর এলো একেবারেই অন্য স্বাদ—King of Pop Cultural Night। মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গীতকে উৎসর্গ করা এই রাত ছিল আলো, সুর আর নাচের উৎসব।
Place Masséna-র চেকারবোর্ড স্কোয়ার আর ঝলমলে ভাস্কর্যগুলো যেন স্টেজ হয়ে উঠল। প্রথম সুর বাজতেই পুরো শহর প্রাণবন্ত হয়ে উঠল। Shubham তখনই তার প্রথম disco dance চেষ্টা করল (সত্যি বলতে কী, আরও practice দরকার, তবে উৎসাহ দেখে মনে হচ্ছিল সে-ই নতুন তারকা!)। আমি হাসতে হাসতে তাল মিলিয়ে নাচিলাম আর হাততালি দিতে দিতে গলা ফাটাচ্ছিলাম হাজারো মানুষের সঙ্গে।
মজার ব্যাপার হলো, দুপুরের ফুলের পাপড়ি তখনও মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল, তার মাঝেই ঝলমলে আলো আর জোরালো বিট—মনে হচ্ছিল ঐতিহ্য আর আধুনিকতার একসঙ্গে হাত ধরা উৎসব চলছে।
কেন সুন্দর কার্নিভাল আমাদের হৃদয় চুরি করেছে
Carnaval de Nice-এর বিশেষত্ব শুধু উৎসব নয়, শহর নিজেই। একদিকে ঝকঝকে নীল ভূমধ্যসাগর, অন্যদিকে পাহাড়ের কোমল ঢাল—নিস যেন ছবি আঁকা এক শহর। প্যাস্টেল রঙের বাড়ি, সরু গলি, পুরোনো শহরের ব্যস্ত বাজার আর কফিশপের উষ্ণতা সব মিলিয়ে উৎসবের আবহ যেন প্রতিটি কোণায়।
এটি কেবল প্যারেড বা কনসার্ট সম্পর্কে নয় - এটি পরিবারগুলি একসাথে হাসতে থাকা, অপরিচিত ব্যক্তিরা পাশাপাশি নাচতে এবং সুন্দর শহরটি তার আনন্দময় আত্মাকে দেখিয়ে দেয়।
ফিরতি পথে Shubham বুকে আঁকড়ে ছিল তার সংগ্রহ করা ফুলের তোড়া আর confetti দিয়ে covered মাথা। চোখ আধো ঘুমে ভরা, তবু মুখে চাপা হাসি—সে বলল, “আমরা কি প্রতি বছর আসব এখানে?” সত্যি বলতে, ‘Nice’ আমাদের মনেও একই প্রশ্ন জাগিয়ে দিয়েছিল।
আজকের মতো এইটুকু এ। আবার আসবো আমরা অন্য কোনো পথের, অন্য কোনো পাঁচালি নিয়ে।