প্রকৃতি মনকে শান্ত করে। সবুজের ঘনঘটায় চোখ জুড়িয়ে আসে। গ্রীষ্মের শেষ স্বাদটুকু চেটেপুটে নিয়ে, আমরাও তৈরী কঠিন শীতের মুখোমুখি হতে! ঠিক তখনি - শান্ত নদীর অলস স্রোতে মন যায় ভেসে, অলসভাবে, দূরে কোথাও - জন্মভূমির ডাকে! দুগ্গা এলো, দুগ্গা এলো, কাশ ফুলের হাত ধরে, দূরে কোথাও … স্মৃতিতে!
নীল আকাশের বুকে গুটিগুটি পায়ে হেঁটে চলে হালকা সাদা মেঘের দল, মন মজে ওঠে শরতের কোমল রোদ্দুরে। দেবীপক্ষের সাথে সাথে মন নেচে ওঠে আমাদের এই সাত-সমুদ্র তেপান্তরের মাঠ পেরোনো দেশে, ফিনল্যাণ্ড-এ!
প্রতি বছরের পুজোই আলাদা - নিজ গুণে, নিজ চক্রে। এবারের পুজোটাও আলাদা, কালচক্রে! পৃথিবীর প্রচলিত নিয়মগুলো উল্টেপাল্টে দেয়া এই টালমাটাল সময়ে দেবী দুর্গার আরাধনা অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্য্যপূর্ণ। অশুভ শক্তির বিনাশিনী দেবী দুর্গার মর্তে অবতীর্ণ হওয়া ভীষণ প্রয়োজন। অশুভ রাক্ষসেরা যখন নির্বিকারে গণহত্যা চালায় পৃথিবীতে, পৃথিবীর নিয়মগুলোকে উল্টে পাল্টে বিজিত ঘোষণা করে শুধুই মিথ্যাকে, তখন বিশেষ প্রয়োজন মহাশক্তি মহামায়ার সঠিক পথ প্রদর্শনের।
আমাদের বেঙ্গলি এসোসিয়েশন অফ ফিনল্যাণ্ড-এর এবারের দুর্গাপুজো আলাদা, আমরা দেবী দুর্গাকে নতুন রূপে সাজিয়ে নিয়ে এসেছি কলকাতা থেকে। পুরোনো মূর্তি আমরা আবারও দান করেছি সংগ্রহশালাকে। প্রতি বছর আমাদের পুজোয় অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বেড়েছে আমাদের সদস্যসংখ্যাও! তারই হাত ধরে ধরে বেড়েছে আমাদের সংস্কৃতিচর্চাও - শুধু সংখ্যাতত্বেই নয়, গুণমানেও। তৈরী এক ঝাঁক কচিকাঁচাও। বাংলা ভাষা, সাহিত্য আর সংস্কৃতিচর্চার মধ্যে দিয়েই কচি-থেকে-বুড়ো, আমরা বয়ে নিয়ে চলেছি আমাদের ঐতিহ্য। সাথে অবশ্যই তাল মিলিয়ে চলছে জোর লড়াই - পেটুক বাঙালির আগামী প্রজন্মের স্বাদের মালিকানা দখলের - পিজ্জা-পাস্তা বনাম ডাল-ভাত-লুচি-তরকারি-মাংস! মনে হয়, আমরা আমাদের লক্ষ্যে সফল - বাংলা ও বাঙালিয়ানার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতার বিচারে!
তবু থেকে যায় মনুষ্যত্বের প্রতি দায়বদ্ধতা। আশাকরি কুপমুন্ডকতা কাটিয়ে আমরাও পারবো আমাদের দায়বদ্ধতার পরিচয় রাখতে, শেখাতে পরবর্তী প্রজন্মকে! মিথ্যে যদি জিততে থাকে, আগুন যদি জ্বলতে থাকে, মানুষ যদি মরতে থাকে - লড়তে হবে সবাই মিলে - দুগ্গা মাকে সহায় রেখে, নারী-পুরুষ-যৌন-ধর্ম নির্বিশেষে, সাত-সমুদ্দুর তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে, দেশ-বিদেশে।
ইন্দ্র
২৯.০৯.২০২৫