Introduction / ভূমিকা

The drama মেরুদণ্ড is an adaptation of the acclaimed Bengali film হীরক রাজার দেশে directed by the legendary Satyajit Ray. Today’s drama presents a humorous and satirical perspective on moral courage, honesty, and the challenges faced by an individual of integrity in a corrupt society.

This drama is a fictional piece inspired by an acclaimed Bengali film and serves as a satire. We want to reassure our audience that our intention with this presentation is not to cause harm or hurt anyone’s feelings.

এই নাটকটি একটি কল্পিত রচনা যা খ্যাতনামা বাংলা চলচ্চিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং একটি রসাত্মক উপস্থাপনা। আমাদের উদ্দেশ্য কাউকে আঘাত করা বা কারও অনুভূতিতে আঘাত দেওয়া নয়।


গোলকধাম রাজ্য is governed by a ruthless মহারানী (queen) who takes advantage of her subjects and dismisses any opposition. The citizens live in poverty while the queen and her courtiers accumulate colossal wealth. She influences her opponents through a যন্তরমন্তর machine by brainwashing them and removing their capacity for independent and moral thinking. Those who used to protest were sent to the যন্তরমন্তর room for brainwashing. The queen’s only enemy was Sorol Pandit. He was a schoolteacher who believed in moral values. In a corrupt society, Sorol Pandit refused to compromise on his values. Sorol Pandit believes that a person’s মেরুদণ্ড, the moral backbone, is the most critical asset and essence of a person’s character, and without a solid ethical foundation, one may achieve material success but will miss out on the genuine fulfilment that arises from leading a virtuous and honest life.

গোলকধাম রাজ্য শাসন করেন এক মহারানী। তার অত্যাচারে, প্রজারা অতিষ্ঠ, জর্জরিত। যতই আকাল-অভাবই হোক না কেন, কাটমানি বকেয়া রাখতে পারতেন না প্রজারা। মহারানী তার প্রজাদের থেকে সুবিধা নিয়ে সমস্ত বিরোধিতাকে অবহেলা করতেন। নাগরিকরা দারিদ্র্যে বসবাস করে, আর রানী ও তার সভাসদরা প্রচুর সম্পদ সঞ্চয় করেন।

যারা এসবের প্রতিবাদ করত, মগজ ধোলাইয়ের জন্য যন্তরমন্তর ঘরে পাঠিয়ে দিতেন মহারানী। ‘যন্ত্রের মাধ্যমে বিরোধীদের প্রভাবিত করতেন, তাদের স্বাধীন এবং নৈতিক চিন্তার ক্ষমতা কেড়ে নিতেন। মহারানীর একমাত্র শত্রু ছিলেন সরল পণ্ডিত। তিনি একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি মূল্যবোধে বিশ্বাস করতেন। এক দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজে সরল পণ্ডিত তার মূল্যবোধের সাথে আপস করতে অস্বীকার করতেন। সরল পণ্ডিত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে একজন ব্যক্তির মেরুদণ্ড হল একজনের চরিত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।

নাটকের চরিত্রগুলো

  1. মহারানী
  2. বিদূষক
  3. সভাকবি
  4. শিক্ষামন্ত্রী
  5. শিল্পমন্ত্রী
  6. সরল
  7. লাবণ্য
  8. প্রহরি
  9. বুদ্ধিজীবী

Scene 1

Location
গোলকধাম রাজ্য দরবার…. বসে আছেন গোলকধামের রানী, তার সভা পরিষদেরা।

Music 1
উন্নয়নের ভাঙা কাঁসর খান


রানী
শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি এই মাটি আর মানুষের দরবার…
প্রথমেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি ঢালাও উন্নয়ন করবার…

বিদূষক
প্রতিশ্রুতি নির্বাচনে লড়বার…

রানী
না না,
একটা কথা আগে স্পষ্ট করে দিতে চাই…
এই উন্নয়নের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো যোগ নাই…
মাটি আর মানুষের স্বার্থ দেখাই একমাত্র লক্ষ্য।

বিদূষক
কুৎসা করে বিরোধী পক্ষ…

রানী
হ্যাঁ, কুৎসা করাই ওদের কাজ,
বিরোধী পক্ষ ধান্দাবাজ…
কি… ঠিক কিনা…

বিদূষক + সবাই
ঠিক… ঠিক…

রানী
তা, সভাকবি, তুমি বিশ্রাম নিচ্ছো যে বড়ো…
বলি, নতুন বচন-টচন প্রস্তুত করো…

সভাকবি
আগ্গে মহারানী,
ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ বচন রচনার কাজ…

বিদূষক
সভাকবি খুব সচল আজ।

রানী
বেশ, বেশ! তা কী বচন লিখেছো, এখুনি করো পেশ।

সভাকবি
তবে শুনুন, মহারানী…
সৎ লোকেরা নিজ দোষে
পিটুনি খাচ্ছে জনরোষে…

রানী
(হে হে)…
সৎ লোকেরা নিজ দোষে
পিটুনি খাচ্ছে জনরোষে…
চমৎকার… খাসা!

বিদূষক
কী ভাষা

রানী
মজা পাচ্ছি বড়ো…
সভাকবি আরও পড়ো…

সভাকবি
সৎ লোকেরা নিজ দোষে পিটুনি খাচ্ছে জনরোষে
সৎ লোকেরা পুলিশের তলোব পেলে ঠিকানা সোজা জেলে…

রানী
(ইস!)…
এইসব লিখতে গেলে কেনো… যদিও সবই আমারি চক্রান্ত…
তাই সৎ লোকেরা সব জেলে…কিছুতে ছাড় পাই না Bail-e

বিদূষক
কিন্তু মহারানী…
এ তো বড়ো অনাচার…

রানী
চুপ…
তোমার দেখি বুদ্ধি-সুদ্ধি সব পেয়েছে লোপ…

বিদূষক
আগ্গে মহারানী,
টাকা থেকে শিশু, সব চুরিতেই সরকার
টিভিতে দেখছে সবাই সততার ট্রেলার…

রানী
লাখ লাখ ঘুষ, নিয়ে এরা করবে মিছিল

বিদূষক
প্রজারা কোনদিন ছুড়বে জুতো, মারবে মিছিলে ঢিল

রানী
আপাতত জানতে চাই অন্য প্রসঙ্গ…
বলো শিক্ষা মন্ত্রী…
আমার দুর্নীতির আসল ষড়যন্ত্রী।

শিক্ষামন্ত্রী
(হে হে)… পেন্নাম হয়…
মহারানী…
বন্ধ করে দিয়েছি… শিক্ষা দীক্ষার সব কাজ…

রানী
বা বা,
এত দারুণ সংবাদ…

শিক্ষামন্ত্রী
আজ থেকে লেখাপড়া সব বাদ!

রানী
মনে জাগে বড় আহ্লাদ…
থাকবে সবাই মূর্খ হয়, করবে না প্রতিবাদ

শিক্ষামন্ত্রী
(হে হে)…
করেছি এমন ব্যবস্থা,
শেষ হবে না … শিক্ষা-দীক্ষার দুরবস্থা।

রানী
(হা হা) … চমৎকার …
কেউ প্রশ্ন করবে না আমাকে তাড়াবার…

শিক্ষামন্ত্রী
এরা যতবেশি পড়ে,
ততবেশি জানে, তত কম মানে…

রানী
(হে হে)…
টুকলি করতে দিতে হবে…শিক্ষককে দিলো মার…

বিদূষক
একি মামার বাড়ির আবদার…

শিক্ষামন্ত্রী
যদি কাজ না করে মাথা,
জমা দেবে কি সাদা খাতা?

বিদূষক
শুনেছি,
সকলে তো এখন দিব্বি টুকলি করে পিএইচডি পায়।

শিক্ষামন্ত্রী
আর, জিএসসি, পেট-এ দুর্নীতি চললেই অন্যায়?..

রানী
শিক্ষামন্ত্রী,
ছাত্রেরা তো শুনছে না তোমার বাণী

শিক্ষামন্ত্রী
হ্যাঁ, মহারানী।
মিড ডে মিল নিয়ে চলছে সবজায়গায় হানাহানি

রানী
সেটা জানি…
বলি আরও বেশি করে করো রাহাজানি

শিক্ষামন্ত্রী
শিক্ষায় উন্নয়ন তো মহারানীর অতি প্রিয় থিম

বিদূষক
তা তেলেভাজা হোক বা হাসের ডিম?


Music 2
Background Music


রানী
নানাবিধ চুরিতে তোমাদের জুড়ি মেলা ভার,
তাই তো দিতে চাই তোমাদের অনেক উপহার।
এসো হে তোমরা সবাই… তোমরা যাদের আমি পুষি
তোমাদের কাজে আমি বড় খুশি…

শিক্ষামন্ত্রী
ধন্যবাদ মহারানী…

রানী
শহরে বিশ কোটি, গ্রামেগঞ্জে তিরিশ…

(একজন, একজন করে পুরস্কার নিতে এগিয়ে আসে)

বিদূষক
পঁচিশ শতাংশ রেখে বাকি গোলকধামের মহারানীকে থুড়ি ভাইপোকে দিস…

শিক্ষামন্ত্রী
হে হে…
নিষ্ঠা ভরে করেছি দুর্নীতির কাজ,
আপনার জন্য চুরি করে ধন্য হলাম আজ…

রানী
পাহাড় থেকে সাগর হাসছে…
এই রাজ্যে সবাই নাচছে …
কি ঠিক কিনা…

সবাই
ঠিক… ঠিক…

শিক্ষামন্ত্রী
আজ ঘুচে গেছে …সব ব্যবধান
যতো চোর, বদমায়েস… পায় সব সম্মান

বিদূষক
হাসছে সুন্দরবন… বইছে উন্নয়ন…

শিক্ষামন্ত্রী
চাকরি নাই থাক
শিল্প যায় যাক…

রানী
যেন সর্বদা বাজতে থাকে
উৎসবের ঢাক…
তা বিদূষক, তোমার কি মার্সিডিজ গাড়ির শখ?

বিদূষক
মহারানী থাকলেও শখ, তা পুরোনর আশা জিরো
আমি কি আর সিনেমার লিডিং হিরো?

রানী
ভালো কথা,
শিল্পমন্ত্রী কোথায়,
দেখি না তো টিকি তার!

শিল্পমন্ত্রী
আগ্গে মহারানী, কাছেই আছি …

রানী
বলো শিল্পমন্ত্রী, শিল্পসংস্থানের কি খবর,

শিল্পমন্ত্রী
এতো সবার জানা,
৩৪ বছরের অনেক দেনা…

বিদূষক
অমূল্য রতন গেলো খোয়া
কে দেখাবে এখন চাকরির মায়া…

রানী
সময় গেছে কেটে
শিল পোঁতা আর প্রতিশ্রুতির ধোঁপে।

শিল্পমন্ত্রী
শিল্প এসেছে, কিন্তু বাংলায়, মহারানী
শিল্প এসেছে,
যদিও সেটা ফুলের বালিশ আর তেলেভাজা চপে…

বিদূষক
সাধারণ লোকেদের ট্যাক্সের টাকায় চলছে অনবরত কতো প্রচার

রানী
সবাই জানে কী করছে মা মাটির সরকার…
সভাকবি কি বলো…

সভাকবি
আগ্গে মহারানী …
যদি একটু নাড়েন উৎসবের কল,
অর্থনীতি-দুর্নীতি ভুলে রাজকার্য হবে জল…

রানী
ইনকাম বন্ধ, চিটফান্ড নাই…
রোজ,রোজ, শিশু পাচারের জন্য বা কোথায় পাই…

বিদূষক
এদিকে সবাই করছে খাই, খাই,

রানী
বলি কিছু তো একটা করা চাই
কি ঠিক কিনা…

সবাই
ঠিক… ঠিক…

রানী
সভাকবি মন্ত্র লিখতে হবে… রানীবচন…
এক শ্রমিকের জন্য,
এক শিক্ষকের জন্য
সবার খবর হচ্ছে না শোনা
বলি হঠাৎ কিসের এতো আলোচনা

শিল্পমন্ত্রী
দুর্নীতি ধান্দা করিয়েছি যত…

বিদূষক
তাতে হয়েছিল লজ্জায় মাথা নত…

রানী
আহ…সভাকবি করো তোমার কাজ

সভাকবি
আগ্গে মহারানী …বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভালো কাজ না,
ভরপেট নাও খাই, কাটমানি দেওয়া চাই,
যায় যদি যাক প্রাণ, আমাদের মহারানী ভগবান।

রানী
চমৎকার… খাসা

বিদূষক
কী ভাষা

সভাকবি
আরও শুনুন মহারানী …
লেখাপড়ে করে যে,
অনাহারে মরে সে,
জানার কোনো শেষ নাই,
জানার চেষ্টা বৃথা তাই,
বিদ্যা লাভে লোকসান,
নাই অর্থ নাই মান,

বিদূষক
গোলকধামের মহারানী অতিব বুদ্ধিমান,
বুদ্ধিজীবী…জনগণ… সকলে মিলে করো তার জয়গান।
আমাদের মহারানী ভগবান।


Fade-out. Everyone exits stage.

Scene 2

Location
গ্রামে একটি ছোট বাড়ি… সরল আর লাবণ্য দাঁড়িয়ে আছে…

Music 3
Background Music


সরল
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে… কাটমানি দেব কিসে?

লাবণ্য
ধান ফুরল, পান ফুরল, উপার্জনের উপায় কী মিনসে?

সরল
আর ক’টা দিন সবুর কর, এক্সট্রা টিউশন নিয়েছি

লাবণ্য
আলু, পিঁয়াজ গেছে পচে…সর্ষে ক্ষেতে জল…
খরা-বন্যায় শেষ করলো বর্ষার সব ফল…

সরল
ধানের গোলা, চালের ঝুড়ি
সব যে শুধু খালি, খালি…

লাবণ্য
ঘরে আছে একজোড়া পোলাপান,
কীভাবে করবো তাদের অন্নদান

সরল
স্কুলশিক্ষক আর শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা গেছে থেমে…

লাবণ্য
সকলে মজেছে এখন কানন আর বৈশাখীর প্রেমে…

সরল
ডুবল গরিবের টাকা গোলাপ ভ্যালি, সারদায়ে…

লাবণ্য
অথচ মোদের নেতারা লজ্জা না পায়ে…

সরল
হাজার অনুষ্ঠান
শুধু নাচগান,

লাবণ্য
জনতার টাকা শুধু ক্লাবে ঢেলে যান

সরল
সাধারণ মানুষের ওষ্ঠাগত প্রাণ

লাবণ্য
জিনিসপত্রের দাম কমার
নেই কোনো নাম।

সরল
কে কোথায় মরে গেল,
কার ঘর ভেঙ্গে গেল….

লাবণ্য
কিছু যায় আসে না।

সরল
আমরা সাধারণ মানুষ…সাতে পাঁচে থাকি না

লাবণ্য
এবার তাহলে পুজোয়, জুতো-জামা, লিপস্টিক, কিছুই হবে না।

সরল
কি করে হবে সোনা? সব মাইনে ইএমআই-তে গত।
ঘুষ, দুর্নীতি, মিথ্যে… আর কত?

লাবণ্য
কারও নেই মেরুদণ্ড
থাকো তুমি সৎ…

সরল
(শোনো)
দুনিয়া জুড়ে বাঙালির খ্যাতি বাড়বে ক্রমে আরো…
বাঙালি থেকে বং… পার্বতী থেকে পারো…

লাবণ্য
আহ… পার্বতী থেকে পারো…সেটা তো নামেরই শর্টফর্ম…
তাই তো বলি তোমার মাথায়, বুদ্ধি-সুদ্ধি কম…

সরল
রাজনীতি দলাদলি…

লাবণ্য
করোনা একটু কোলাকুলি…
লোকের ভালো চেয়ে
মিছিলে স্লোগান দিয়ে
হবে’টা বা কি?

সরল
সকালে সূয্যিমামা গুটিগুটি দেয় হামা
উর্দিটা গুঁজে কলার ধরে থানায় নিয়ে গেল পুলিশমামা

লাবণ্য
লকআপ খুলে চ্যালাকে বগলে তুলে
নেতা বেরোলেন থানা থেকে হেলেদুলে

সরল
নেতা, মন্ত্রী , পুলিশ, আমলা… সবকটা হ্যাংলা
কাটমানির লোভে মানুষকে মারে

লাবণ্য
বেয়াদপি দেখলেই পুরবে কারাগারে

সরল
এই তো ক’দিন আগে পিজি করে, করে সব এলোমেলো,
আলো – জল নিভিয়ে, মেয়েটা চলে গেল …

লাবণ্য
সারদা, নারদা ঘুরে ইউটার্ন মেরে সব নেতারাই আজ মগডালে…

সরল
অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সয়ে…

লাবণ্য
তবে উৎসব করে …. তাদের কে প্লাস্টিকে মুড়ে…দেহ ছুঁড়ে দেয় নদীর স্রোতে

সরল
ভাবছো কি … আন্দোলন করে দাবি আদায় করবো

লাবণ্য
প্রতিবাদ করলে হার্মাদদের গুলিতে মরবো?

সরল
নারীরাই দেখছি আগামিতে বাড়াবে দেশের সুনাম।

লাবণ্য
বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও, আগেই বলেছিলাম

Enters প্রহরি, বিদূষক, সভাকবি.

বিদূষক
তা শিক্ষক, তোমার শুনেছি, সৎ থাকার খুব সখ।

প্রহরি
তা একটু আছে বইকি, নাহলে আর কইকি?

সভাকবি
বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভালো কাজ না
ভরপেট নাও খাই, কাটমানি দেওয়া চাই

সরল
আগ্গে এই সামান্য টাকায় সংসার টানা বড় দায়।

লাবণ্য
দুই বেলা জোটে না আহার…
কানা-কড়ি নাই আমার…

প্রহরি
অনেক হয়েছে সৌজন্য, ধৈর্য্য আর নাই

সরল
একটা কিছু উপায়, বার করা চাই।

বিদূষক
বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভালো কাজ না

সরল
কিসের খাজনা…চুলোয় যাক দুনিয়া…

প্রহরি
শুনেছি রানী প্রতি স্কুলে দান করবেন খেলনা

সরল
হ্যাঁ উনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মিডডে মিলের চালনা (র)

বিদূষক
পড়াশোনা চুলোয় যাক, স্কুলে হোক নিত্য নতুন উৎসব

সরল
কিন্তু করের টাকায়, উৎসবের জন্য এত ব্যয়…
সেটা অন্যায়

প্রহরি
তুমি কি কানা,
এতো সবার ভালোভাবে জানা

সরল
ছাড়তে পারেন না, ওনার ভুরি ভুরি মিথ্যে কথা বলার অভ্যাস।

প্রহরি
কার এতো সাহস, যে রানীর নামে বলে কুকথা,
এখনই ধড় থেকে আলাদা করে দাও তার মাথা

সরল
মিথ্যে কথা বারবার বললে সত্যি মনে হয়,

লাবণ্য
সত্যি কথা চেঁচিয়ে বললে ভিক্ষে মনে হয়

বিদূষক
মিথ্যে কথা চেঁচিয়ে বললে মানুষ জড়ো হয়।

প্রহরি
এখনো আছে সময়, আর বিলম্ব নয়

সরল
মনে রেখো অন্যায় করলে পাবেনা পানি

প্রহরি
এই কে আছিস? আন তো একটা লাঠি!
পুজোর মধ্যেও করছে আমার পিছনে কাঠি…

বিদূষক
মুখ বেঁধে ফেলো,
হাত পা বেঁধে ফেলো,
এই ব্যাটাকে পড়াও শক্ত করে হাতকড়া…

প্রহরি
বন্দী করি কারাগারে…
আজীবন পচুক অন্ধকারে।

লাবণ্য
অনাচারের সীমা ছেড়ে
অভাগারে ভাতে মেরে

সরল
আনে দেশে ঘোর অমঙ্গল

সভাকবি
বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভালো কাজ না
অনাহারে নাই খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ।
যে কয় পেটে খেলে পিঠে সয়, তার কথা ঠিক নয়

বিদূষক
ভরপেট নাও খাই, উন্নয়ন বলে চেঁচানো চাই
যাই যদি যাক প্রাণ, আমাদের মহারানী ভগবান।

প্রহরি
বুদ্ধিজীবী…জনগণ… সকলে মিলে করো তার জয়গান।
আমাদের মহারানী ভগবান।

প্রহরি সরলকে ধরে নিয়ে যায়। সবাই মঞ্চ ত্যাগ করে. মঞ্চের আলো নিভে যায়

Scene 3

Location
কারাগার

Music 4
কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়… ও ভাইরে ও ভাই কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়।…


সরল
শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ, মাসের পর মাস

বুদ্ধিজীবী
এটাই ওনার সবকা সাথ, সবার বিকাশ

সরল
যার কাজ নেই,
তার কথার কোনো দাম নেই

বুদ্ধিজীবী
দিন রাত প্রচার চলছে, রাজ্য হচ্ছে প্রচুর বিকাশ

সরল
একুশ বছর ধরে তো রাজ্যবাসীকে দিচ্ছেন আসলে বাঁশ

বুদ্ধিজীবী
চারিদিকে তো উন্নয়নের জয় জয়কার

প্রহরি
দেখতে পাও না তোমরা সরকার

বুদ্ধিজীবী
উনি শিল্পী, উনি সাহিত্যিক, উনি কবি,

প্রহরি
এবার পূজাতে ঝুলবে আমাদের মহারানীর হাসিমুখের ছবি

সরল
বিজ্ঞান আজ এগিয়ে গেছে, মানুষের হাতে মিডিয়া আছে

বুদ্ধিজীবী
টিভি, ফেসবুক, খবরের কাগজ এইসব দিয়েই তো ভোলায় মগজ
জনসাধারণ বোকা,
উন্নয়ন দেয় ধোঁকা

সরল
কলমই তো বন্দুকের থেকে বেশি আগুন ঝরায়
মানুষের মধ্যে শুভবৃদ্ধির চেতনা জাগায়

বুদ্ধিজীবী
আমরা তো বিক্রি হই তিরিশে, কোটি

প্রহরি
বিরোধীশূন্য করে দিয়েছেন আমাদের, চটি

সরল
এতটা সাহস দেখাও এখনও বুকে

বুদ্ধিজীবী
জাল ভোট দেয়ে গণনা কেন্দ্রে ঢুকে

প্রহরি
কি সুন্দর উইকেট পড়ছে দেখো পর পর
জেল থেকেই তো চলছে এখন শিক্ষা আর খাদ্য দপ্তর

বুদ্ধিজীবী
শিক্ষক কিসের এত ক্ষোভ?
রাস্তায় দেহ ফেলে
কেন দেখাও বিক্ষোভ?

প্রহরি
শিক্ষার দাম নাও পাই,
উন্নয়ন বলে চেঁচানো চাই

বুদ্ধিজীবী
এত প্রকল্প, এত সাথী

সরল
কত কোটি খরচ হয়েছে
মানুষ এখনও বাকি

বুদ্ধিজীবী
বেয়াদপি দেখলেই পুরবে মহারানী

প্রহরি
যন্তরমন্তর ঘরে হবে মগজধোলাই

বুদ্ধিজীবী
নাগরিক মনে জমছে যে ক্ষোভ
শাসক দেখায় আবার উৎসবের লোভ

সরল
যতই চোখ রাঙাবে
চোখের জলে সবাই প্রতিরোধ শানাবে

বুদ্ধিজীবী
উৎসবে মাতুন
পুজোতে থাকুন

প্রহরি
বৃথা হয়রানী
বলেছেন আমাদের মহারানী

সরল
গুণবান, দয়াবান তোমার বিচার হবে…ভূতেদের দরবারে
এই রাজ্যকে ধ্বংস করেছ তাজা রক্তের কারবারে…

বুদ্ধিজীবী
এই শহরে কত কি ঘটে …
কে জানে কি নতুন রটে…

সরল
সমাজের আয়না …
পুকুরচুরি আর উৎসবে দিয়ে ঢাকা যায়না

প্রহরি
এখন তো চলছে সুদিন,
ঘুমিয়ে আছে আলাদিন

সরল
জিএসসি, পেট নিয়ে ভুরি ভুরি অভিযোগ

বুদ্ধিজীবী
চাকরি পাওয়ার পরেও বাতিল সমস্ত নিয়োগ

প্রহরি
তোমাদের এই একটাই রোগ …
খালি কুৎসা আর অভিযোগ

সরল
জনগণের টাকায় আদালতে মুখ পোড়ায়
গন্ডারের থেকেও মোটা চামড়া এদের গায়ে

প্রহরি
এটা কিন্তু ছোট ঘটনা,
বার বার বললে মন্দ হয় না…

সরল
মানুষ বাঁধো জোট
নইলে গুঁজতে হবে নোট
পকেট খালি হবে
মেরুদণ্ড বিক্রি হবে

প্রহরি
এই কে আছিস… এই ব্যাটাকে বন্দী কর কারাগারে…
আজীবন পচুক অন্ধকারে।

বুদ্ধিজীবী
বৃথাই পথে ঝরিয়েছো ঘাম
হয়েছে কত চুরি …কোটি টাকা তার দাম

প্রহরি
সবকটা কে জেলে ভরে
করা উচিত মগজধোলাই

বুদ্ধিজীবী
এ যে বিনা মেঘে পড়ে বাজ
কেঁচে বুঝি গেল আমার কাজ
বিদ্যা লাভে লোকসান,
নাই অর্থ নাই মান,

প্রহরি
গোলকধামের মহারানী অতিব বুদ্ধিমান,
বুদ্ধিজীবী…জনগণ… সকলে মিলে করো তার জয়গান।
আমাদের মহারানী ভগবান।

সবাই মঞ্চ ত্যাগ করে. মঞ্চের আলো নিভে যায়

Scene 4

Location
গোলকধাম রাজ্য দরবার

Music 5
Background Music


রানী
এই বৃষ্টি, এই মেঘ, গরম কমার নাম নেই
বরাদ্দ টাকা জমেই আছে, রাজ্যর কোনো ইনকাম নেই
কোথা থেকে করবো জোগাড়, ভাবতে রক্ত হিম হয়ে যায়
চলো দরবারের… কাজ শুরু করি কারণ বেলা বয়ে যায়।

বিদূষক
নিন্দা শুনলে, গায়ে সয় যায়।

রানী
না নিন্দা শুনলে আমার রক্ত উঠে যায় মাথায়

বিদূষক
পিজি করে যা হলো, সেটা কি ঠিক হলো?
এবার চুকোতে হবে দাম। না হলে মহারানীর বদনাম।

রানী
আহা, ওই কথা আর তুলো না
এই ব্যাপারে শাসক কতটা মানবিক সেটা দেখো
প্রমাণ ছাড়া আঙুল তুলছো যে বড়
সবকটা প্রমাণ করা হয়েছে তো জোড়
সভাকবি চুপ করে বসে থেকো না, এই নিয়ে একখান বচন পড়ো।

সভাকবি
শুনুন মহারানী,
নিরাপত্তার ঠুনকো বড়াই…
রাজ্য আসলে তপ্ত কড়াই…

রানী
নিরাপত্তার ঠুনকো বড়াই
রাজ্য আসলে তপ্ত কড়াই
(এই)… তোমার তো মনে হয় মনে মনে খুব ফুর্তি
বাইরে যারা অপেক্ষা করো, তারা আসুক, করো সভা ভর্তি।

সবাই মঞ্চে প্রবেশ করে

রানী
পণ্ডিত তুমি এতই ধূর্ত, এতই চতুর
জনতার সাথে সর করে আমাকে করবে ফকির এতটা সাহস
শিক্ষা-দীক্ষা সব তো বন্ধ, উন্নয়নের জন্য এত আফসোস

সরল
মহারানী, শ্রমিক এখানে বিনা চিকিৎসায় মরে
অনাহারে চাষি আত্মহত্যা করে
নারীর সম্মান বিকোয় জলের দরে
জামিন পেয়ে চোরেরা ফেরে নিজ ঘরে
রাজ্যের এমন করুণ হাল
জানিনা চলবে কতকাল

বিদূষক
যতই হোক করুণ
দেশ হচ্ছে ডিজিটাল

সরল
সুরক্ষিত করতে নিজে সিংহাসন,
রানী চালায় অপশাসন

রানী
দিনে দিনে তোমার স্পর্ধা বাড়ছে এখন
রানীকে শেখাও কিভাবে চালাতে হয় প্রশাসন
সভাকবি করো তোমার কাজ

সভাকবি
বাকি রাখা খাজনা, মোটে ভালো কাজ না
ভরপেট নাও খাই, রানীকে কাটমানি দেওয়া চাই
মিনিমামে নেই খেদ, মিলে মিশে খেলে বাড়েনা মেদ
ধন্য কাটমানি অনুদান, আমাদের মহারানী ভগবান

লাবণ্য
ধর্ষিতা নারী, বঞ্চিত মানুষ, চারিদিকে অনেক অন্ধকার

রানী
কোন হরিদাস পাল, ধরবে হাল, কার আছে হিম্মত

লাবণ্য
কে আছো দামাল, দেখাও কামাল, তোমরাই আমাদের ভবিষ্যত

রানী
শোন পণ্ডিত তোমার হবে মগজধোলাই
ঢোকাও একে যন্তরমন্তর ঘরে, মুছে ফেল সমস্ত শিক্ষামন্ত্র
চুলোয় যাক গণতন্ত্র…
এই কে আছিস… এই ব্যাটাকে নিয়ে যা ওখানে…


Music 6
গুপী বাঘা ফিরে এলো …ভূতের রাজা ফিরে এলো


লাবণ্য
এইবারে রানী শোন,
নেই কোনো নিস্তার, নেই কোনো ক্ষমা

সরল
অনেক পাপ যে হয়েছে জমা
এসেছে তোমার যম , তুমি আর তোমার সাথীরা এবার হবে অক্ষম

বুদ্ধিজীবী
অনাচার করো যদি, রানী তবে ছাড়ো গদি,
যারা তার ধামাধারি, তাদেরও বিপদ ভারী…

লাবণ্য
মানুষের শোষণ পাপ,
নাই কোনো পড়িত্রাণ

সরল
এবার পড়ো এদের যন্তরমন্তর ঘরে, এবার বলো সবাই
সিবিআই, সুপ্রিম কোর্ট আর ইডি ধরে মারো টান,
রানী হবে খান খান

সবাই
দড়ি ধরে মারো টান
মারো টান,
রানী হবে খান খান

সবাই মঞ্চে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, বিদূষক সামনের দিকে এগিয়ে আসবে

বিদূষক
অমর সৃষ্টি যে করে গেছেন, তাঁর নেই কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী, তিনি অপরাজিত।
পথের পাঁচালী থেকে চারুলতা, প্রফেসর শঙ্কু থেকে ফেলুদার মাথা,
আশনি সংকেত থেকে আগন্তুক, ঘরে বাইরে — তিনি নায়ক।
তিনি বাঙালির মুখ।
কি ঠিক কিনা…

সবাই
ঠিক ঠিক ঠিক।

Curtain call


Music 7
Background Music


সমাপ্তি