প্রতি বছর দুর্গাপূজা আসে, মুছেও যায় ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে খুবই তাড়াতাড়ি। তারপর অপেক্ষা আবার একটা বছর। কিন্তু এবারের দুর্গাপুজো একটু আলাদা। যে নারীশক্তির আরাধনার জন্য আমরা ৩৬৫ দিন অপেক্ষা করে থাকি, সেই নারীর প্রতি বঞ্চনা, নির্যাতন ও তীব্র দ্বেষ দেখাতে আমরা পিছুপা হইনা সারাটা বছর! ৯-৯০ বয়েসের পরিধি অবধি ধর্ষণ করতে আমাদের বিবেকে বাঁধে না একবারও, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে - আমরা মানুষ? প্রতিহিংসার আগুনে হাজার-হাজার মহিলা-শিশুদের ৩৬৫ দিন ধরে ঠাণ্ডামাথায় খুন করার জন্য আমাদের রাষ্ট্র-যন্ত্র ব্যবহার করতে একটুও ভাবতে হয় না - আমরা মানুষ? বাঁধেনা বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন মৃত্যুযজ্ঞের হাতিয়ার তৈরী করতে! আমাদের মনুষ্যত্বের পরিচয় আজ ধর্ষণ-অত্যাচার-প্রতিহিংসা ও মৃত্যুর উৎসবের উল্লাসে! আমরা মানুষ, তাই ভাবি যে যা করছে করুক! আমি তো ভালো আছি, বাকিদেরটা বোঝার আমার নেই প্রয়োজন!

আমরা আমাদের বাচ্চাদের অসুর চিনতে শেখাই একটা কালো ভয়ঙ্কর চেহারার অবয়ব দেখিয়ে, শেখাইনা তাদেরকে মানুষ চিনতে, কাজের বিচারে! সাদা-কালো-রোগা-মোটা-লম্বা-বেঁটে চেহারাই আমাদের পরিচয়, আর মুখোশের আড়ালে থাকা বিষাক্ত মনটা থাক লুকিয়ে। এই তো আমাদের পৃথিবী! করোনা-র থেকেও বিষাক্ত এই ভাইরাস আজ ছড়িয়ে রয়েছে কলকাতা থেকে হেলসিঙ্কি, সমস্ত পৃথিবীতে, মানুষের চেহারা নেয়া মুখোশের আড়ালে।

এবারের দুর্গাপূজাটা আলাদা, তাই অনেকটাই আলাদা। এই পৃথিবীতেও কিছু শিরদাঁড়া এখনো সোজা আছে, থাকতে চায় সোজা, চোখে-চোখ রাখতে চায় আগামী প্রজন্মের - বলতে চায় - ভয় পাস না, আমরা আছি - এই পৃথিবীটাকে দূষণমুক্ত করার দায়িত্ব তো আমাদেরই - তোদের জন্য রেখে যাবো নীল আকাশ, সবুজ দিগন্ত আর মান ও হুশ নিয়ে তৈরী মানুষের মনুষত্ব! যে মনুষত্ব শেখাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে, যে মনুষত্ব শেখাবে প্রয়োজনে পথে নেমে দাবি আদায় করতে, যে মনুষত্ব শেখাবে সব মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মানের সাথে গ্রহণ করতে! নারী-পুরুষ-যৌন-ধর্ম নির্বিশেষে হাথে-হাথ রেখে এক নতুন নির্মাণের সৃজন-সুখে উন্মত্ত হতে!

স্বার্থপরতার সংকীর্ণতাকে পেছনে ফেলে তাই শুরু হোক শক্তির আরাধনা, নিজের সাথে নিজের লড়াইয়ের প্রয়োজনে থাক মানসিক শক্তির প্রার্থনা। মূর্তির অসুরের বদলে চিহ্নিত হোক সুন্দর মুখের আড়ালে লুকোনো আসল অসুরেরা। থাক অঙ্গীকার - অশুভের সাথে আপোষবিহীন লড়াইয়ের - বিচারভিক্ষা না চেয়ে বঞ্চনার বিরুদ্ধে কেড়ে নেই চলো বেঁচে থাকার অধিকার। এ সুন্দর পৃথিবীকে শিশুদের বাসযোগ্য করে যাওয়ার থাক অঙ্গীকার, সৃজন এর সৃজনীতে ভরে যাক সৃষ্টিসুখের উল্লাস।

০৮.১০.২০২৪