ফার্স্ট হ্যান্ড vs সেকেন্ড হ্যান্ড এক্সপেরিয়েন্স

দুই বন্ধু সিনেমা দেখতে গেছে intermission এর সময় বুঝেগেছে সিনেমা টা বেশ বাজে হয়েছে পুরোটা বসে দেখা খুব কঠিন। ইন্টারমিশন এ বাইরে আসতেই এক ভদ্র লোক ধরলেন কেমন দেখছেন ভাই কেমন হয়েছে সিনেমা টা ?
প্রথম বন্ধু : দুর্দান্ত দারুন হয়েছে দেখে আসুন।
দ্বিতীয় বন্ধু : সে কি রে !! তোর ভালো লাগছে !!
প্রথম বন্ধু : আরে ধুর কিন্তু আমরা এতক্ষন বসে সময় নষ্ট করে পায়সা নষ্ট করে দেখবো আর উনি বাইরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে জেনে যাবেন কেমন হয়েছে ? তার থেকে নিজে দেখে বুঝুন।( সংগৃহীত).

কবিতার সিনেমা

জনপ্রিয়তার নিরিখে কবিতার স্থান বরাবরই অনেক নিচে। সেকারণেই হোক বা অন্য কারনে সিনেমায় কবিতার ব্যবহার খুব একটা দেখা যায় না। তবু ব্যতিক্রম আছে যেমন ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’। সিনেমায় কবিতার এতো সুন্দর ব্যবহার আমি আর দেখিনি। জয় গোস্বামী আমার অন্যতম প্রিয় কবি হওয়াই এই সিনেমায় ব্যবহৃত বেশিরভাক কবিতা আমার আগেই পড়া ছিল, সিনেমাটা দেখতে দেখতে বেশ কিছু কবিতা নতুন চোখে আবিষ্কার করেছিলাম। যেমন ‘হৃদি ভেসে যাই অলকানন্দা জলে’ এবং ‘পাগল’ এই কবিতা গুলোর মধ্যে একটা কাহিনি লুকিয়ে আছে আগে মনে হয়নি। সিনেমাটা শেষ হওয়ার পরে একটা ঘোর এর মধ্যে ছিলাম, কি দেখলাম সিনেমা না কবিতা ? অনেকটা এরকম বিভ্রান্তি ঘটেছে সম্প্রতি সিনেমা ‘অযোগ্য’ এর একটি গান শুনে , মনে হচ্ছে এটা কি গান শুনছি না জীবনানন্দের কবিতা।

তোমার দুঃখে আমি
আমার দুঃখে তুমি,
আমাদের এই বেঁচে থাকা।
আকাশ শূন্য করে
পাখিদের ঝাঁক চলে,
যাওয়ার দৃশ্য মনে রাখা।
[ 'অযোগ্য আমি' গানের পংক্তি লেখক অনুপম রায় ] 

এ তো গেলো কবিতার সিনেমার কথা।সিনেমার কবিতা বা সিনেমা দ্বারা অনুপ্রানিত কবিতার একটি অসাধারণ উদাহরণ হলো কবি শ্রীজাত বন্দোপাধ্যায় ওয়েটিং রুম (নীচে)

ট্রেন চলে গেছে। ফিরে আসবেনা বৃষ্টির মরশুমে
কেউ ফিরে যায় বাস্তবে আর কেউ ওয়েটিংরুমে।
মানুষ কীভাবে স্মৃতি ফিরে পায়, বৃষ্টির কাছে শেখা
রাতের স্টেশনে আটকে পড়েছে নাসিরুদ্দিন রেখা।
চশমার ফ্রেমে কবেকার জল...এক থেকে গেছে চোখও...
হয়তো দুজনে দেখা হবে বলে বর্ষার রেল রোকো।
'তুমি ভাল আছ?...  'এই চলে যায়...তুমি ঠিকঠাক?'...'এই...'
ঝড়জল মাখা ওয়েটিংরুমে আর কোনও কথা নেই।
পুরনো দিনের সাদা কালো ছবি পড়ে
থাকে ভেঙেচুরে
গুরু গুরু মেঘ গুমরি গুমরি গরজে গগনে, দূরে।
কাছে থাকে শুধু ওয়েটিংরুম, রাত্তির দিয়ে ঘেরা,
জীবন মানে তো সময়ের কাছে ইজাজত  চেয়ে ফেরা।
ভোর হলে ট্রেন স্টেশনে ঢুকবে। খুলে দেখে নিও মুঠো,
বৃষ্টির তোড়ে এক হয়ে গেছে আলাদা ঠিকানা দুটো।
বাকি থাকে শুধু টুপটাপ কথা... বাকি থাকে চিঠি লেখা
স্টেশনেরা থাকে। দূরে চলে যায় নাসিরুদ্দিন রেখা।

প্রথম বড়পর্দা , প্রথম সারি মানেই ভালো নয়

প্রথম বড়পর্দায় দেখা প্রথম সিনেমা 'দুষ্টু মিষ্টি। তখন আমি প্রাইমারী স্কুলে পড়ি। আমার প্রাণের বন্ধুর নাম দুষ্টু আর ওর দিদির নাম মিষ্টি। একদিন স্কুল থেকে ফিরে শুনি ওরা সিনেমা দেখতে যাবে, সিনেমার নাম 'দুষ্টু মিষ্টি। আমি তো যাকে বলে হতবাক। আমারি চেনা জানা দুজন বন্ধুর নাম সিনেমার নাম এ তো আমার কাছে অলীক ব্যাপারের শামিল। ‘আমিও যাবো’ বলে ঝুলে পারলাম ওদের সাথে। ইতিমধ্যে বড়দের আলোচনায় বুঝলাম সিনেমার টিকিট কাটা হয়েছে কিন্তু ভালো টিকিট পোওয়া যায় নি, একদম প্রথম সারির টিকিট পাওয়া গেছে।আমার কাছে ইটা একটা ধাঁধা বলে মানে হলো. তার আগে পাড়ার স্টেজ function দেখার অভিজ্ঞতা ছিলো। সেখানে তো সামনের দিকে বসার জন্যে ঝগড়া মারামারি লেগে জযে তো । এদিকে এখানে প্রথম সারির টিকিট কে বলা হচ্ছে ভালো নয় .সিনেমা দেখতে গিয়ে সম্যক উপলদ্ধি হলো কেন ভালো নয়। সিনেমার গল্পটা ছিলো দুজন স্কুল পড়ুয়া মেয়ের নানা রকম দুস্টুমির মিষ্টি মিষ্টি।গল্প। সিট্ যেমন ই হোক সিনেমাটা খুবই এনজয় করি. এরপর কিছুদিন আমি আর দুষ্টু ওই সিনেমাটার প্রচুর গল্প করি, দুষ্টু মিষ্টি খেলিও খেলাটা নিজেরাই আবিষ্যকার করেছিলাম। অনেকটা রোলে প্লে টাইপের খেলা তখন তো আমাদের ভিডিও গেম ছিলোনা, নিজেরাই অনেক খেলা আবিষ্কার করতাম।

নুন শোয়ে হেডস্যার এর আচমকা আগমন

এটা যে সময়ের কথা তখন মাস্টারমশাইরা ছাত্রদের গায়ে হাত তুললে সেটা তো অপরাধ বলে মানে করা হাতই না বরং, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক মনে করা হতো। অনেকেই মানে করতো নিয়মানুবর্তিতা রক্ষার্থে একটু আধটু মারধর করা খুবই জরুরী। তবু মফস্বলের স্কুলের এই হেড স্যার কোনোদিন ছাত্রদের মারধর তো দূর আস্ত বাঁকা ঝাঁক ওকরেন নি. এ হেনো রাশভারী হেড স্যার একদিন নূন শো চলাকালীন সিনেমা হলে উপস্থিত হলেন। উনি আগেই জানতেন যে ওনার স্কুল এর কিছু ছাত্র সেদিন. নুন শো দেখতে গেছে। হল এ ঢুকে গম্ভীর গলায় বললেন 'আমার স্কুলের যেসব ছেলেরা এখানে আছিস হল থেকে বেরিয়ে আয়. আমি পিছনফিরে দাঁড়াচ্ছি।কারো মুখ দেখছি না. এখন থেকে বেরিয়ে সোজা স্কুলে চলে যাবি। অদ্ভুত ব্যাপার এটুকু শুনেই ওই স্কুলের ছাত্ররা হল থেকে বেরিয়ে গাল. এমনই ছিল স্যার এর ব্যক্তিত্বের জোর. ( সংগৃহীত).

নামকরণের সার্থকতা

তখন সদ্য Bombay IIT তে পড়তে গেছি। সেই প্রথম বাড়ি ঘরে ছেড়ে অন্য রাজ্যে থাকা। প্রথমসপ্তাহেই বাংলা বই বাংলা সিনেমা মিস করতে শুরু করেছি। এর মধ্যে দেখলাম ক্যাম্পাস এর কমিউনিটি হল এ বাংলা সিনেমা পথের পাঞ্চালি দেখানো হবে। সিনে ক্লাব এর মেম্বার হওয়ার সুবাদে দেখতে ছুটলাম। হোস্টেল এ ফেরার পার একটি মরাঠি মেয়ে ধরলো তুমি সিনেমা দেখতে গেছে না?আচ্ছা এই সিনেমাটার নামের মানে মানে কি ‘পাত্থর পাঞ্চালি’ নাম কেন? আমি যথা সম্ভব বোঝানোর চেষ্টা করি ‘পাত্থর পাঞ্চালি’ নয়, সিনেমার নাম পথের পাঞ্চালি মানে হলো সং অফ দা রোড। রোড মানে এখানে জীবনের পথ ইত্যাদি ইত্যাদি । মেয়েটি বললো ও আমি তো ভেবেছিলাম ‘পাথর পাঞ্চালি’। পাঞ্চালী প্রিন্সেস ছিলো আর এ যুগের পাঞ্চালী দুঃখে কষ্টে শোকে দারিদ্রে পাথর হয়ে গেছে। আহা কি নামকরণ আর কি তার এক্সপ্লানেশন। এমন ভাবে বিভূতিভূষণ ন বা সত্যজিৎ রায় কেউ ই ভাবতে পারেন নি. বড়ই মৌলিক চিন্তা ভাবনা, কোনো সন্দেহ নেই।