আমাদের পথের পাঁচালী

এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলতো

ষাট এর দশকের বেশ সুন্দর রোমান্টিক ছায়াপট, তবে ভেবে দেখেছেন কি , পথ শেষ না হতেই পারে কিন্তু ‘জ্বালানী’ ? Practically ভাবতে গেলে গানটি রোমান্টিক হলেও বেশ বিপজ্জনক , মানে পথ শেষ হওয়ার বদলে জ্বালানি শেষ। অথবা নায়িকা যখন বললেন, “তুমি ই বোলো।…”, নায়ক বললেন পেট্রল পাম্প পঞ্চাশ কিলোমিটার পরে। এহেন প্রত্যূত্যরে নায়িকার মানসিক সন্তুলন ঠিক রাখা বেশ চ্যালেঞ্জিং।

রোড ট্রিপ এর কিছু রোমান্টিক-আনরোমান্টিক , প্রাকটিক্যাল - ইম্প্র্যাক্টিক্যাল , ভালো মন্দ অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের এবারের লেখা “আমাদের পথের পাঁচালী”। এই পাঁচালীর পদে পদে আমাদের ছুঁয়েছে কখনও পাহাড়ের গম্ভীরতা , কখনও জঙ্গলের অনিশ্চয়তা , কখনও বা সমুদ্রের উচ্ছলতা।

বেশ কিছু বছর আগের এভাবেই আমরা পৌঁছে গেছিলাম প্রত্যন্ত কিন্তু চমকপ্রদ লাহৌল-স্পিতি উপত্যকায় । আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল দিল্লী থেকে , via মানালি যে adventurous পথ পার হয়ে kaza পৌছালাম, সেটা হিমালয়ের সবচেয়ে কঠিন এবং মনোরম ল্যান্ডস্কেপের মধ্যে একটি । বারো হাজার বসতির এই শীতল মরুভুমিতে প্রাণী অথবা উদ্ভিদকূলের টিকে থাকাটা "survival of the fittest " এর একটি যোগ্য উদাহরণ।

আমাদের যাত্রার সময়কাল Atal Tunnel এর আগেকার , তাই Google map এ এখন distance ২০০ kms দেখায় , কিন্তু তখন সে ছিল অর্ধেক দিনের যাত্রা যেখানে রাস্তা বলতে দূর থেকে দেখা যাই গগনচুম্বী পাহাড়ের গায়ে যেন কাঁচা হাতে আঁকা একটা রেখাপথ। আমরা খুব সকালে মানালি থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, Rohtang Pass হয়ে ১৫০০০ ft উচ্চতার Kunzum Pass অতিক্রম করে Spiti Valley যখন প্রবেশ করি তখন সূর্যদেব অস্তাচলে। যাত্রাপথে যত রাস্তা এগোতে থাকে তার থেকে দ্রুত বদলায় বাইরের দৃশ্যপট। সুন্দর সবুজে ঘেরা Manali র ভ্যালি থেকে সাদা বরফে ঘেরা Kunzum Pass, তারপর ধীরে ধীরে কোন মায়াবী যেন প্রকৃতির রং রূপ শুষে নিয়ে শেষে একটি রুক্ষ ধূসর Winter Dessert এ পরিণত করেছে। Kunzum Pass এ আমরা পেয়েছিলাম বরফাবৃত স্নিগ্ধ সাদা প্রকৃতি , তারপর Spiti Valley তে এসে দেখেছিলাম প্রকৃতির নতুন রূপ যা ধূসর কিন্তু মলিন নয়- প্রকতির সে এক অন্য সৌন্দর্য।

সেই দিনের শেষে আমরা পৌছালাম Kaza র একটু ছোট্ট cozy হোটেলে। এসে প্রথমেই আমাদের কাজ next কিছুদিনের সওয়ারী খোঁজা, আর পেয়েও গেছিলাম একদম মনপসন্দ হৃষ্টপুষ্ট Bullet 5০০ আর all set for real adventure… adventure এর 1st pitstop হলো Indian Oil পেট্রল পাম্প, পৃথিবীর সবচেয়ে উচতম Petrol Retail Outlet , 12000 ft উচ্চতায়।

স্পিতি উপত্যকায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত 50 মিমি। অপ্রত্যাশিতভাবে, হাতে গোনা বৃষ্টি দিনের মধ্যে ,আমরা এই শীতল মরুভূমি তে বৃষ্টি পেয়েছিলাম প্রথম দিনে , বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ঢুকে পড়েছিলাম Key Monastery, আর ভেতরে পেয়েছিলাম বৌদ্ধ ধর্মের উষ্ণতার ছোঁয়া।

মঠে প্রায় 250 জন সন্ন্যাসীর থাকার ব্যবস্থা আছে, যারা সারা বছর পবিত্র দেয়ালের মধ্যে থাকে। কিছু ভিক্ষু শীতকালে দক্ষিণ ভারতীয় Kushannagar (Coorg) মঠে যায়, বাকিরা মঠের দেয়ালের ভিতরে থাকে। এই মঠগুলিতে তাদের নিয়মিত Lama গুরু থাকেন, এই গুরুদের , গুরু রিনপোচের পুনর্জন্ম হিসাবে মান্য করা হয়।

আমাদের Second দিনের সফর ছিল Kibber village. Kibber র বাসিন্দারাও তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম পালন করে। প্রকৃতপক্ষে, গ্রামটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি বিশেষ তাৎপর্য ধারণ করে। Parang La Pass জুড়ে স্পিতি উপত্যকা এবং লাদাখের মধ্যে একটি প্রাচীন বাণিজ্য পথ কিবেরে শুরু হয়।

পথে যেতে যেতে রাস্তা দুদিকে এলো মেলো ভাবে পরে থাকা স্তূপাকার জীবাশ্ম যেন প্রাগৈতিহাসিক প্রাকৃতিক উথাল পাথালের ইতিহাস লিখে রেখেছে। Langza গ্রাম জীবাশ্ম সংগ্রহ জন্য স্পিতি উপত্যকায় সবচেয়ে বিখ্যাত, তবে স্পিতি উপত্যকার সমগ্র অঞ্চলটি কিব্বার সহ জীবাশ্মময়। যদি এখানে সামুদ্রিক জীবাশ্মের উপর হোঁচট খেয়ে থাকে, তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কারণ পুরো হিমালয় বেল্টটি শুধুমাত্র প্রাচীন টেথিস সাগর থেকে উঠেছিল।

Key Monastry র কথা বললে Tabo Manstry র কথাও বলতে হয়। এটি ভারত এবং হিমালয় উভয়ের মধ্যেই সবচেয়ে পুরাতন ক্রমাগত বৌদ্ধ ছিটমহল হিসেবে পরিচিত। এর দেয়ালে প্রদর্শিত বিপুল সংখ্যক ফ্রেস্কো বৌদ্ধ প্যান্থিয়নের কাহিনী চিত্রিত করে। সেখানে আমরা দেখেছিলাম ভারতের উচ্চতম একটি Open Helipad, সেখান থেকে একটু এগোলেই Sumdo, ভারত চীন বর্ডার।

আমাদের সাথে অনেকটা পথ আপনাদের নিয়ে এলাম , এবার মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি জ্বালানী শেষের দিকে। আবার দেখা হবে অন্য কোনো পথে অন্য কোনো পাঁচালী নিয়ে।