সব খেলার সেরা বাঙালীর তুমি ফুটবল
কি মধু আছে ঐ তোমার নামেতে আহা ফুটবল
বাঙালি ফুটবল অন্ত প্রাণ। সেই ৮৬ সালে যবে থেকে মারাদোনার আবির্ভাব, রঙিন টেলিভিশন আর মারাদোনা সহকারে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা বাঙালী আর ফুটবল যেন একান্ত প্রাণ। ফিফা যখন নির্ণয় করে যে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ কাতার তথা পশ্চিম এশিয়ার মরুভূমিতে হবে তাও আবার শীতকালে, সেটা হয়ে ওঠে এককথায় যাকে বলে বাঙালীর পোয়া বারো।
ছয় বাল্য বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কাতার ভ্রমণের। টিকিট ,যাতায়াতের আয়োজন সব মিলিয়ে এক প্রোজেক্ট।নতুন ওয়াটস অ্যাপ গ্রুপ তৈরি হোল যেখানে আলোচোনা আর সিদ্ধান্ত। ৩ মহাদেশে ছড়িয়ে থাকা জনগণ, বাকি আয়োজন হলেও সমস্যা টিকিট নিয়ে। শেষমেশ ভারতবাসী বন্ধুরাই ভরসা। রাত ১০তায় ফিফা সাইট এ ঢোকা আর রাত ৩ টে তে সিদ্ধিলাভ। ৮ খানা টিকিট মেসি, রোনালদো সহকারে, আর পায়কে যাকে বলে গুলশন গ্রোভারের কথায় দিল গার্ডেন গার্ডেন।
এলো সেই সন্ধিক্ষন। ২৮ শে নভেম্বর যাত্রা শুরু।কাতারে অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্য দেশের মতই আবহাওয়া। কাজ করার লোক ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিন-পূর্ব এশিয়া ,আর আফ্রিকার লোক।মনেই হয়না ভারতের বাইরে আছি।দোকানপাট, খাবারদাবার , থাকার ব্যাবস্থা সবই ভারতের মত।খরচা ২০-২৫ শতাঅংশ বেশি। ভূমিপুত্রেরা প্রাসাদেই থাকেন কাজেই তাদের দেখা মেলা ভার। মেট্রো, বাস সবই সহজলভ্য অন্তত ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বিনামূল্যে। হায়া কার্ড জরুরি। মোটামুটি ফিনল্যান্ডের শীত থেকে বাঁচার ভালো উপায়।
আগেই বলেছি বাঙালী আর ফুটবল একান্ত প্রাণ। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই। দ্বিতীয় সব চেয়ে বেশি জনগণ ভারত থেকে তার অর্ধেকেরো বেশি বাঙালী। কেউ এসেছে সপারিবারে, কেউ পিতাপুত্র সহকারে। আমাদের মত জনতার ও অভাব নেই। সব মিলিয়ে যেন এক কার্নিভ্যাল। কলম্বিয়ান্দের সাথে স্ট্রিটফুড, ফ্যান জোনে মেক্সিকানদের সাথে ম্যাচ দেখা আর আরজেনটাইনদের সাথে মেসির গোলে উল্লাস , এখনো ভাবলে রোমাঞ্চবোধ হয়।
কোথা দিয়ে যে ১০ দিন কেটে গেল বুঝতেই পারলামনা। ১০ই ডিসেম্বর বিদায়ের দিন যখন এসে গেল মনে একটাই আশা ছিল মেসির হাতে যেন কাপ দেখতে পাই। ৮৬ সালে মারাদোনা যেমন বাঙালীর আবেগকে নাড়া দিয়েছিল , এবারের বিশ্বকাপ শেষে মনে হল ৩৬ বছর পর সেই পুরনো স্মৃতি তৈরি হল। তফাৎ শুধু চল্লিশোর্ধ বাঙালী আজ আশির দোরগোড়ায় আর কিশোর বাঙালী আজ চল্লিশের দ্বারে। আরো একটি তফাত দেখলাম সেবারের আর্জেন্টিনা প্রেম টিভির পর্দায় ছিল এবারে যেন চোখের মণিতে গাঁথা রয়ে গেল।