গল্পর নামটা পড়ে মনে হচ্ছে NASA থুড়ি ISRO র প্রেক্ষাপটে মিষ্টি প্রেমের গল্প? না না, সেরকম কিছু নয়।

তখন ২০১৬ সাল, সাংহাইতে ছিল তখনও দাস দম্পতির প্রারস্তিক ভাষাযুদ্ধ চলছে। সাংহাই তে পৌছানোর পর, Mandarin Chinese এর সাথে আমাদের প্রাথমিক ভাষাশিক্ষা শুরু হয়েছিল Pinyin এর হাত ধরে। বলা বাহুল্য Pinyin হল ইংরেজি অক্ষরে Mandarin লেখা। চলতি কথা এ যাকে বলে SMS ভাষা। তখনও অবধি নানারকম আকার ইঙ্গিতই ছিল লোকসমক্ষে ভাব আদান প্রদানের আমাদের মুল অবলম্বন।

তা প্রতিকূলতা যতই থাকুক না কেন, বাঙালীদের ভোজন রসিকতাকে তো কোনো প্রতিবন্ধকতার মোড়কে আটকে রাখা যাইনা। তাই মাঝেমধ্যেই আমরা টু মারতাম টুকটাক এদিক ওদিক রেস্তোরায় নিত্য নতুন খাবারের সন্ধানে। আমাদের পরবর্তী মিশন ছিল 17৪1. এর কাছে একটি মঙ্গোলিয়ান রেস্তোরাঁ। ফুরফুরে রবিবার দুপুর, কর্তা গিন্নি পুরো উদ্দমে চললাম সেই মঙ্গোলিয়ান রেস্তোরা তে। মেনু দেখে যেটুকু বোধগম্য হলো তাতে তালিকাভুক্ত সবকিছুই সহযোগী পরিবেশন পদ। মুরগি, মটন, ল্যান্ব সবই আছে, আছে রুটি, আছে পানীয়, কিন্তু মেইন্‌ ডিশ এর কোথাও কোনো উল্লেখ নেই। বেশ কিছুক্ষণ বেয়ারার সাথে প্রশ্ন উত্তর পর্বের পর সে আমাদের বোঝাতে অসক্ষম হলো। তাই সাথে করে নিয়ে গেলো রেস্তোরার রান্নাঘরে। যা দেখলাম তাতে মনে হচ্ছিলো “ডি লা গ্রান্ডি মেফিস্টোফিলিস! য়াক যাক!” তারপর বেয়ারা আরো কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছিলো আমি মনে মনে বললাম ইস, ইস,-আর বলিসনি! এমনিতেই পেট চুইটুই করছে তার ওপরে ওসব বললে একদম হার্টফেল করব। চেঙ্গিস খান এর দেশের খাবার রসাম্বাদনের থেকে সেদিন পশ্চাদপসরণই শ্রেয় মনে হয়েছিল। যাই হোক, রেস্তোরা থেকে বেরিয়ে বেশ অনেকটা এ নিরাপদ বোধ করছিলাম। এবারে ভনিতা না করে বলেই ফেলি সেদিন মেইন ডিশ কি ছিল।

এঁতিহ্যবাহী মঙ্গোলিয়ান খাবারগুলো ভারী মাংস (গরু, ছাগল, উট, ভেড়া) হয়, এবং তাদের এতিহ্য অনুযায়ী পরিবারের সবাই একসাথে খাবার গ্রহণ এর প্রচলন আছে। সেদিন রেস্তোরার রান্নাঘরে তন্দুর হচিছিলো উটের গোটা পা। নিতান্ত্যই চেঙ্গিস খান এর বংশধর না হলে উটের গোটা পা খাওয়া বেশ দুঃসাহসিক ব্যাপার।

যাই হোক, মঙ্গলময় এর ইচ্ছেয় সেদিন পশ্চাদপসরণ করে , বাঙালি দম্পতি র মঙ্গোল জয় হয়তো অসম্পূর্ণই থেকে যেত, যদি না আমাদের চৈনিক বন্ধু Stella (Hua Zhang), Inner Mongolia বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব না আনত। সেটা প্রায় দুমাস পরে। তার মাঝের সময়টা আমরা মঙ্গোলিয়ান রেস্তোরা বেশ এড়িয়ে এ চলতাম।

বিশ্বের সবচেয়ে কম জনবসতি সম্পন্ন দেশ মঙ্গোলিয়া। Inner Mongolia, চীনের অধীন স্বশ্বাসিত অঞ্চল, দেশটির আরেক নাম “Land of the horsemen” দেশটির নাম করতে এ মনে ভেসে ওঠে চেঙ্গিস খান আর ঈগল কাঁধে ঘোড়সওয়ারের দল।

আমাদের সফর ছিল পাঁচ দিনের। সাংহাই Hongqiao এয়ারপোর্ট থেকে পাঁচ ঘন্টা এ পৌছালাম “Ordos এয়ারপোর্ট” এ। এয়ারপোর্ট থেকে গাড়ী নিয়ে সোজা “Shāmò” মানে মরুভূমি, আমরা পৌছালাম “49৬ মরুভূমি” বিস্তৃত মরুভূমি তে জনবসতি নামমাত্র, মাঝে মাঝে কিছু ঝোপ গাছ আর তাবুর মতো দেখতে স্বল্প কিছু ঘর। রাত্রি যাপনের পর আমাদের যাত্রা শুরু GrassLand এর দিকে। পথে দেখলাম Double Hump Camel.

মাঝে মঙ্গোলিয়ান টেন্ট এ খাওয়া হলো “Yangrou Dangao” , অর্থাৎ মটন এর soup সাথে রুটি। আমাদের বন্ধু Stella কে অনেক ধন্যবাদ, এই সফর এ আমাদের কোনোরকম বিভীষিকাময় খাবারের সম্মুখীন হতে হয়নি। দিনের শেষে GrassLand এ পৌছে মঙ্গোলিআ র অন্য রূপের দেখা মিললো। সেই রাতের মতো পরিষ্কার খোলা আকাশের তারা দেখার সময়টা যেন চোখ বুজলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে আজও।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম আমাদের জন্য প্রতীক্ষারত চারপেয়ে। সেদিনের আমাদের জন্য বরাদ্দ ছিল ঘোড়সোয়ারি। Stella সাথে কথা বলে, শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমাদের সেদিনের GrassLand ভ্রমণ শুরু হলো। GrassLand এ মঙ্গোলিয়ানদের দৈনিক জীবনযাপনের সাথে ঘোড়সওয়ারি আজও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। অনুমান করা এ যায় , কাঁধে ঈগল অশ্বারোহী মঙ্গোলিয়ান জাতটি প্রকৃতি গত কারণেইরুক্ষ এবং কঠিন। সেই রুক্ষতার প্রমান স্বরূপ, সেই রাত এ আমার ব্রাতা ছিল Volini Gel আর heat pack.

স্কুল এ পড়াকালীন ইতিহাস এর সিলেবাস এ যে মঙ্গোলিয়ার সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল, তাতে দেশটির প্রতি বিকর্ষণের প্রভাবই বেশি ছিল। Inner Mongolia সফর, আমাদের মনে অন্য রকম ছায়া ফেলেছিলো। ছোটবেলাকার সেই আড়িটা সেদিন বেশ ভাব এ পরিণত হয়েছিল। চেঙ্গিস খান এর বিরূপ প্রতিকৃতি মন থেকে ঝেড়ে ফেলে এক নতুন মঙ্গোলিয়ার সাথে আমাদের সখ্যতা হল, হলো বাঙালি দম্পতি র মঙ্গোল জয়, আধিপত্যের নয়, ভালোবাসার, ভালো লাগার।