ঝলমলে রোদ নয়, পেজা তুলো নয়, শিউলি ফুলের গন্ধ নয় – এই সুদুর উওর মেরুতে, শরতের আকাশে ভারাক্রান্ত মেঘ আর রোদের পালাবদলের মাঝেই সূচনা আমাদের দুর্গোৎসব। ফিনল্যান্ডে এখন শরতের মৌসুম। চারিদিক লাল, কমলা আর হলুদ পাতার সাজে এক অসাধারণ রুপে সুসজ্জিত। প্রকৃতিও যেন মায়ের আগমনীর প্রস্ততিতে মেতে উঠেছে | এ এক অপূর্ব দৃশ্য যা এক গভীর অনুভূতির সৃষ্টি করে।

বিগত দুবছর covid-এর মহামারি পেরিয়ে অবশেষে covid-মুক্ত একটা বছরে আমরা পদার্পণ করেছি। গভীর অনিশ্চয়তার ঘন কালো মেঘ যখন আমাদের আচ্ছন্ন করেছিল, তখন আমরা শিখেছি তাঁকে নমন করতে। আর শিখেছি সেই কালো মেঘের পেছনে লুকিয়ে থাকা আশার আলোকে সামনে রেখে এগিয়ে চলতে…যেমন বিপুল দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে হতাশ হয়েছি, তেমনই, একজন আরেকজনকে পাশেও পেয়েছি এই দুঃসময়ে। একজন আর একজনকে বলেছি 'চিন্তা কোরোনা, সব ঠিক হয়ে যাবে।’

আজ বাংলার ১৪২৯-এর আশ্বিন মাশের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারি covid কে জয় করেছি আমরা, আমাদের ঐক্য দিয়ে, সমবেদনা দিয়ে, মনুষ্যত্ব দিয়ে। আমরা পরিচয় দিয়েছি এক অদম্য মানসিক শক্তির যা আমাদের প্রতিকূল সময়ের মধ্য দিয়ে পার করে নিয়ে গেছে।

গত দু বছরের online আসরের পর্ব অতিক্রম করে আমাদের এই বছরের সূচনা হয়েছে, বাংলা নববর্ষের মুখমুখি আড্ডা দিয়ে। এর পর আমরা কবি গুরুর ১৬১-তম জন্ম বার্ষিকী উদযাপন করেছি এক পূর্ণাঙ্গ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। জুন মাসের ঝলমলে রোদ্দুরে আমরা বেরিয়ে পরেছিলাম ফিনিশ summer-এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রশস্ত সবুজ সোভায়, বাচ্চা, বড়, সকলে মিলে ভরপুর আনন্দে পিকনিক করেছি। আনন্দের সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো আমরা সঠিক সময় পালন করেছি। এই বছর আমাদের নতুন EC কমিটি নির্বাচিত হয়েছে যা আহ্বান জানিয়েছে অনেক নতুন প্রতিভাদের। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের উৎসাহের মেলবন্ধনে এই বছরের পথচলা চলা শুরু। এর সাথে আমাদের এই বছরের Annual General Meeting ও কার্যকরী ভাবে নিষ্পন্ন হয়েছে।

এবার আসি এই বছরের মূল আকর্ষণ, আমাদের সর্বজনীন দুর্গোৎসব। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, এবারের দুর্গাপুজোতে আমরা তুলে ধরছি বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা প্রস্ফুটিত হবে নানান রকম গান, নাচ ও বাংলার হস্তশিল্পর প্রদর্শনীর মাধ্যমে। সঙ্গে রয়েছে আমাদের এই বছরের কাঙ্ক্ষিত সাংস্কৃতিক পত্রিকা ‘স্রীজন’, যাতে বাস্তবায়িত হয়েছে বহু মানুষের প্রতীক্ষিত মনের ভাব।

বাঙ্গালির এই অমৃত উৎসবে সকলকে স্বাগত জানাই আর আশা করি আগামীকালেও যতই ধকল থাকুক না কেন, তার মধ্যেও মায়ের আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে আমরা একসাথে খুঁজে নেব আনন্দ আর এগিয়ে চলার আত্মবিশ্বাস ।

'রপাং দেহি জয়ং দেহি

যশো দেহি দ্বিষ জহি’