একটি অদ্ভুত অন্যরকম বছর পেরিয়ে আমরা নতুন বছরের খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। একটা পুরো বছর ঘরে কাটানোর স্মৃতি নিয়ে পরবর্তী প্রজন্ম নিশ্চই নতুন কিছু আবিষ্কারের পথে হাঁটবে - যেমন অনেকের কাছেই এখন ভিডিও কনফারেন্স মানেই জুম্, ফটোকপি মানেই জেরক্স, সেরকমই কিছু নতুন, যাতে একটা বোতাম টিপে নিজের অবতারকে পাঠিয়ে ভার্চুয়ালি একই স্পেস এ সোশ্যালাইস করা যাবে! ফিজিক্যাল-ডিজিটাল সবকিছু একসাথে মিশে গেটে ঘ। কিন্তু যতক্ষন না হচ্ছে, আমাদের জেনারেশন এর সেকেলে পুরোনো লোকেদের কাছে সামনা-সামনি আড্ডার কোনো বিকল্প নেই - বেঁচে থাকার রেসিপির এক অনন্য উপাদান। দুধের স্বাদ ঘোলে যদিও আমরা মিটিয়েছি বিগত কয়েক মাস যাবৎ, মন খালি আরো চায় আরো চায়। ভার্চুয়াল দুর্গাপূজার আগে-পরে আমরা আড্ডার আসর সাজিয়ে বসিয়েছিলাম আর মনখুলে গল্প-গান-কবিতা-র সাথে সময় কাটিয়েছি কয়েকটা রবিবার। যতদিন না স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যাওয়া যাচ্ছে, আমরা এভাবেই কিছু না কিছু করে ভার্চুয়ালি আড্ডার আসর জমাবো।
গত বছর আমরা বেঙ্গলি এসোসিয়েশন অফ ফিনল্যাণ্ড প্ৰতিষ্ঠা করার পর, এবছর একটু দেরি হলেও আমাদের বার্ষিক জেনারেল মিটিং করেছি ও নতুন এক্সেকিউটিভ কমিটি তৈরী করেছি অগাস্ট মাসে। ভার্চুয়ালি এরকম একটা নির্বাচন পরিচালনা করার কোনো পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা আমাদের কারুর ছিল না, কিন্তু আমরা দৃঢ়তার সাথে এগিয়েছিলাম আমাদের কনস্টিটিউশনে বর্ণিত প্রতিজ্ঞা পালনের জন্য। সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মেম্বারদের মধ্যে থেকে নমিনেশন নিয়ে, তাদের সম্মতি নিয়ে তারপর ভোটের মধ্যে দিয়ে নতুন কমিটি তৈরী হয়েছে। নতুন কমিটির মূল লক্ষ্যের মধ্যে ছিল এসোসিয়েশনের কাজকর্মে ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতে আরো বেশি করে মেম্বার ও নন-মেম্বারদের জড়িয়ে নেয়া। শুধুমাত্র এক্সেকিউটিভ কমিটিতেই আটকে না থেকে সবাইকে নিয়ে এসোসিয়েশনের কাজকর্ম পরিচালনা করা। আমরা ইতিমধ্যেই নজর দিয়েছি নিয়মিত এসোসিয়েশন এর মিটিং এর প্রতি, লক্ষ - মাসে একটি করে ওপেন মিটিং করা যাতে সবাই একসাথে আলোচনা করে কার্যক্রম চালাতে পারি। নতুন ব্যাঙ্ক একাউন্ট, নতুন ওয়েবসাইট ও সৃজন এ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তো আছেই, তার সাথে ছোটদের অনুষ্ঠান বাড়ানোর প্রচেষ্টও ছিল লক্ষ্যের মধ্যে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটু পিছিয়ে থাকলেও, আমরা গর্বিত যে আমাদের নিও-নরমাল জীবনে রোববারের আড্ডাটা জায়গা করে নিতে পেরেছিলো বেশিরভাগ বাঙালির মধ্যে পুজোর দুঃখ ভুলিয়ে।
এ বছরটায় আমরা হারিয়েছি প্রচুর প্রথিতযশা মানুষকে - বাসু চ্যাটার্জী, ঋষি কাপূর, ইরফান খান, এস পি বালাসুব্রামনিয়াম, জগদীপ, সরোজ খান, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, চুনী গোস্বামী, পি. কে ব্যানার্জী থেকে মারাদোনা, আরো, আরো অনেক মানুষকে - যে নামগুলো আমাদের কয়েক জেনেরেশনের বাঙালি মন কে নাড়িয়ে গেছে, আমাদের কৈশোর-যৌবনে-প্রৌঢ়ত্বে - জীবনের বিভিন্ন আঙ্গিকে। তার সাথে মিশে রয়েছে গোটা পৃথিবীতে হারিয়ে যাওয়া প্রায় পনেরো লক্ষ মানুষ - কোভিড-১৯ যাদের কেড়ে নিয়েছে অকালে। প্রিয়জনের চোখের জলের সাথে মিশে, এদের সবার স্মৃতির প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে চাই এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। তিনটের বেশি ভ্যাকসিন এর সাফল্যের আশা নিয়েই এগিয়ে চলবে আমাদের জীবন, হয়তো নিও-নরমাল আবার ফিরবে নরমাল-এ আগামী বা তার পরের বছর। অনেক পরিবর্তনের সাক্ষী হবেন যারা এ উত্তাল সমুদ্র পেরিয়ে ওপারে পৌঁছতে পারবেন - হয়তোবা অনেক রিচার্ড পার্কারকে সমুদ্রের অতল গহ্বরে তলিয়ে যেতে দেখার দুঃখ বহন করে।
এগিয়ে চলাই তো জীবন! এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে ঠিক পৌঁছে যাবো… সাথে থেকো, কাছে থেকো, ভালো থেকো।